রাজ্যপাল (Governor)

  • রাজ্যপাল একটি অঙ্গরাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক (Nominal) এবং শাসনতান্ত্রিক (Executive head) প্রধান । রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের নামে সমস্ত কাজ করে থাকেন ।
  • সাধারণত রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ এবং অ্যাডভোকেট জেনারেলকে নিয়ে একটি অঙ্গরাজ্যের শাসনবিভাগ গঠিত হয়ে থাকে ।
  • সপ্তম সংবিধান সংশোধনী, ১৯৫৬ অনুসারে একজন ব্যক্তি দুই বা ততোধিক রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হতে পারেন।

রাজ্যপাল পদপ্রার্থীর যোগ্যতা ও শর্তাবলীঃ

  • ভারতের নাগরিক হতে হবে ।
  • বয়স অন্তত ৩৫ বছর হতে হবে ।
  • রাজ্য আইনসভার সদস্য হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে।
  • রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার সময় তিনি সংসদের উভয়কক্ষের বা রাজ্যবিধান সভার সদস্য থাকতে পারবেন না ।
  • কোনও সরকারি বা বেসরকারি পদে অথবা অর্থ প্রাপ্তি হয় এমন কোনোও পদে তিনি নিযুক্ত থাকতে পারবেন না ।

নিযুক্তি ও শপথগ্রহণঃ

  • রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন । রাষ্ট্রপতি নিজস্ব সিলমোহরে স্বীকৃতি দেন।(ধারা ১৫৫)
  • রাজ্যপাল ঐ অঙ্গরাজ্যের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে বা তাঁর অনুপস্থিতিতে বয়োজ্যেষ্ঠ বিচারপতির উপস্থিতিতে শপথ নেন ।(ধারা ১৫৯)

মেয়াদ ও বেতনঃ

  • রাজ্যপালের নির্দিষ্ট কোন মেয়াদ নেই। রাষ্ট্রপতি যতদিন 'সন্তুষ্ট' থাকবেন, ততদিনই রাজ্যপাল তাঁর পদে আসীন থাকবেন(The Governor shall hold office during the pleasure of the President)। সাধারণত, একজন রাজ্যপালের কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর।
  • ভারতের কনসলিডেটেড তহবিল থেকে বেতন ধার্য করা হয়।
  • যেখানে একই ব্যক্তি দুই বা ততোধিক রাজ্যের গভর্নর নিযুক্ত হন, সেখানে রাজ্যপালকে প্রদেয় অর্থ ও ভাতা রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুসারে নির্ধারিত অনুপাতে রাজ্যগুলির মধ্যে বরাদ্দ করা হবে।
  • রাজ্যপালের নিয়োগকর্তা এবং ভাতা তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার সময় হ্রাস করা হবে না।

রাজ্যপালের ক্ষমতা

  • প্রশাসনিক ক্ষ্মতাঃ রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেন রাজ্যপাল । রাজ্যপ্রশাসনের সমস্ত ক্ষমতা তাঁর ওপর ন্যস্ত থাকে । প্রশাসনিক কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য তিনি নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নিয়োগ করেন-
    • রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে অন্যান্য মন্ত্রীদের
    • রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ও রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্যদের
    • রাজ্য নির্বাচন কমিশনার
    • রাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতি তার মতামত নেন ।
    • পদাধিকারবলে রাজ্যপাল রাজ্যের সমস্ত মহাবিদ্যালয় গুলির আচার্য(Chancellor)
  • রাজ্যপাল ও রাজ্য আইনসভা
    • রাজ্য আইনসভা গঠিত হয় বিধানসভা, বিধান পরিষদ এবং রাজ্যপালকে নিয়ে। তাই রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভার সদস্য না হলেও অবিচ্ছেদ্য অংশ।
    • প্রত্যেক নতুন অধিবেশনের শুরুতে এবং নির্বাচনের পর নবগঠিত রাজ্য আইনসভার প্রথম অধিবেশনে রাজ্যপাল ভাষণ রাখেন।
    • তিনি রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করতে বা স্থগিত রাখতে পারেন এবং বিধানসভা ভেঙে দিতে পারেন।
    • ২১৩ নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যের বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত থাকাকালীন প্রয়োজন হলে রাজ্যপাল অর্ডিনান্স(Ordinance) বা অস্থায়ী আইন জারি করতে পারেন যা বিধানসভার অধিবেশন শুরুর ৬ সপ্তাহের মধ্যে বিধানসভার অনুমোদন না পেলে বাতিল হয়ে যায় ।
    • আইনসভার অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষ অনুপস্থিত থাকলে তিনি একজন প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ করতে পারেন।
    • তিনি বিধানসভায় একজন ইং-ভারতীয় সম্প্রদায়ের এবং বিশেষ জ্ঞান সম্পন্ন কয়েকজন ব্যক্তিকে রাজ্যবিধান পরিষদের ১/৬ অংশ সদস্য হিসাবে মনোনীত করতে পারেন।
    • তাঁর অনুমোদন না পেলে রাজ্য আইনসভার উভয় কক্ষে গৃহীত কোনো বিলকে আইনে পরিণত করা যায় না ।
    • রাজ্য মন্ত্রীসভা যদি সংবিধান ভঙ্গ করে অথবা বিধানসভার সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারালেও পদত্যাগ করতে রাজি না হয়, সেক্ষেত্রে রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে রাজ্য মন্ত্রীসভাকে বরখাস্ত করতে পারেন ।
  • অর্থনৈতিক ক্ষমতাঃ
    • রাজ্যপালের পূর্ব সম্মতি ছাড়া অর্থবিল রাজ্য আইনসভায় উত্থাপিত হতে পারে না।
    • পঞ্চায়েত ও পৌরসভাগুলির আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য তিনি প্রতি ৫ বছর অন্তর রাজ্য অর্থ কমিশন গঠন করতে পারেন।
    • কোন জরুরী অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য তিনি রাজ্যের হাতে থাকা আকস্মিক ব্যয় সংকুলান তহবিল(Contingency Fund) থেকে অর্থ প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করতে পারেন ।
  • বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ
    • হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে পরামর্শ করেন।
    • তিনি জেলা আদালতের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন।
    • কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজ্যপাল সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা স্থগিত রাখতে বা মুকুব করতে বা মেয়াদ কমিয়ে দিতে পারেন, তবে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রদর্শনের এক্তিয়ার রাজ্যপালের নেই ।
  • জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ
    • কোন অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল যদি মনে করেন যে সেই রাজ্যে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে সংবিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব নয় তাহলে তিনি সেই মর্মে রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিত সুপারিশ পেশ করেন। রাজ্যপালের সুপারিশে সন্তুষ্ট হলে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যে ৩৫৬ ধারা বা জরুরি অবস্থা জারি করেন।
    • অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি হলে শাসন সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে কুক্ষিগত হয় এবং তিনি রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন।